খাদ্য গ্রহণও যেভাবে ইবাদত

খাদ্য গ্রহণও যেভাবে ইবাদত

জীবন ধারণে অপরিহার্য বিষয় হলো পানাহার। পানাহার ছাড়া মানুষের জীবন রক্ষা অসম্ভব। শক্তি জোগাতে পানাহার করতেই হয়। এর বিকল্প কিছু নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় সুন্দর পরিচ্ছদ পরিধান কর। পানাহার কর, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। -(সুরা আরাফ, ৩১)

খাদ্য গ্রহণ একান্ত প্রয়োজনীয় বিষয় হলেও জীবনের প্রতিটি বিধানের মতো খাবারের ক্ষেত্রেও শিষ্টাচার ও বিধি নিষেধ শিক্ষা দিয়েছেন আল্লাহর রাসুল। বিধি-নিষেধগুলোর প্রতি একটু খেয়াল রাখলেই খাবারও ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়, এতেও সওয়াব লাভ হয়।

খাবার শুরুর আগে হাত ধোয়া, ডান হাত ব্যবহার করা, ডান দিক থেকে শুরু করা এসবই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিক্ষা। আম্মাজান হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) পানাহারের ইচ্ছে করলে, তার উভয় হাত ধুয়ে নিতেন। এরপর খাবার গ্রহণ করতেন কিংবা পান করতেন। (নাসায়ি, হাদিস : ২৬৭; বুখারি, হাদিস : ২৮৮; মুসলিম, হাদিস : ৩০৫; আবু দাউদ, হাদিস : ২২২; ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৫৮৪; আহমাদ, হাদিস : ২৪০৮৩)

খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ, দোয়া

খাবারের শুরুতে দোয়া পড়ার প্রতিও গুরুত্ব দিয়েছেন আল্লাহর রাসুল। বর্ণিত হয়েছে, একবার ছোট্ট সাহাবী উমার ইবনে আবি সালামাহ (রা.) নবীজির সঙ্গে খাচ্ছিলেন, তখন নবীজি (স.) তাকে বললেন- ‘হে বালক! খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলো, ডান হাতে খাও এবং নিজের সামনে থেকে খাও।’ -(সহিহ মুসলিম: ২০২২)

খাবারে শয়তানের অংশগ্রহণ ও বরকত কমে যাওয়া

খাবার গ্রহণের সময় বিসমিল্লাহ না পড়া হলে, সেই খাবারে শয়তান অংশগ্রহণ করে এবং সেই খাবার থেকে বরকত উঠে যায়।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ছয়জন সাহাবিসহ আহার করছিলেন। এমন সময় এক বেদুইন এসে সব খাবার দুই গ্রাসে শেষ করে ফেলল।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, সে যদি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে আহার করত, তাহলে এই খাদ্য তোমাদের সবার জন্য যথেষ্ট হতো। অতএব, তোমাদের কেউ আহার গ্রহণকালে যেন ‘বিসমিল্লাহ’ বলে। সে যদি আহার গ্রহণের প্রারম্ভে ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে ভুলে যায় তবে যেন বলে, ‘বিসমিল্লাহি ফি আওয়ালিহি ওয়া আখিরিহি।’ -(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩২৬৪)

দোয়া পড়তে ভুলে গেলে করণীয়

মানুষ অবচেতন মনে অনেক কিছুই ভুলে যায়, খাবার শুরুর দোয়া পড়তেও ভুলে যায় অনেক সময়। ছোট একটি ভুলের কারণে বরকত থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়। কিন্তু এমন মু্হুর্তেও সুসংবাদ দিয়েছেন আল্লাহর রাসূল। হতাশ না হয়ে আরেকটি দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন, যা খাবার মাঝখানেও পড়া যায়।

আম্মাজান হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘যখন তোমরা খাবার খেতে শুরু করো তখন আল্লাহর নাম স্মরণ করো। আর যদি আল্লাহর নাম স্মরণ করতে ভুলে যাও, তাহলে বলো-

আরবি :

بِسْمِ اللهِ أَوّلَهُ وَآخِرَهُ

উচ্চারণ :

‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওআখিরাহ ‘

অর্থ: আল্লাহর নাম স্মরণ করছি; খাবারের শুরুতে এবং শেষেও।’ (আবু দাউদ: ৩৭৬৭, তিরমিজি: ১৮৫৮)

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন